যেই স্বপ্ন আমাদের লক্ষ্য পূরনের পথে তাড়িত করে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। স্বপ্নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এ পি জে আব্দুল কালাম বলেন,”স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে। স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরনের প্রত্যাশা, মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। আর এমনি স্বপ্ন পূরনের প্রত্যয়ে পথ চলছে রংপুরের কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ তরুণী। ২০১৮ সালের ৮ই ডিসেম্বর স্কুল কলেজ পড়ুয়া কিছু উদ্যমী তরুণ-তরুণী সমাজের অসহায় পথশিশু এবং ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “চলো স্বপ্ন ছুঁই”। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তারা।শীত বস্ত্র বিতরণ,পথশিশুদের নিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন, ঈদের পোশাক উপহার,বøাড ক্যাম্পেইন সব বিভিন্ন প্রশংসনীয় কাজের মাধ্যমে অল্প সময়েই মানুষের ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হয় “চলো স্বপ্ন ছুঁই”। ঠিক এমন সময় বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর মিছিল নিয়ে হানা দিলো প্রানঘাতি মহামারী করোনা ভাইরাস। যেটি এমন এক শত্রু যাকে চোখে ও দেখা যায়। প্রানঘাতি এই করোনা আতঙ্ক থেকে বাচতে সকলে যখন ঘরবন্দী তখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে সম্মুখ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এই তরুণ যোদ্ধারা। বাংলাদেশ এ করোনা পরিস্থিতির সূচনা লগ্ন থেকে গত ২৩ শে মার্চ হতে বিভিন্ন সচেতনতা এবং সহযোগিতা মূলক ইভেন্ট পরিচালনা করে তারা। পিপিই, মাস্ক, গেøাভস এর আস্তরণে সজ্জিত হয়ে সারা শহরে জীবানুনাশক স্প্রে, নিরাপত্তা ছক অঙ্কন,দেয়াল লিখন,মাস্ক বিতরণ, হ্যান্ড ওয়াস বিতরণ সহ বিভিন্ন সচেতনতা মুলক কাজ পরিচালনা করে ” চলো স্বপ্ন ছুঁই” এর এসব তরুণ। পাশাপাশি কর্মহীন নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ এবং রমজানে খেটে খাওয়া রোজাদারদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ সহ ঈদের বাজার করে দেয় তারা। সেই সাথে কুরবানী ঈদে মানুষের কাছে শহরের বর্জ্য অপসারণের কাজ করার পাশাপাশি ৫ শতাধিক মানুষের দুই বেলার খাবারের আয়োজন করে চলো স্বপ্ন ছুঁই”। এখন পর্যন্ত রংপুর নগরীর প্রায় ২০০০ পরিবারের মাঝে ত্রান সহায়তা এবং অসংখ্য পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে সক্ষম হয় তারা। পাশাপাশি করোনা কালে অসহায় হয়ে পড়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে দফায় দফায় মেডিকেল ক্যাম্পেইন এর আয়োজন এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মা-বোনদের বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করে “চলো স্বপ্ন ছুঁই”। এরপরে তারা ভাবতে থাকে যেহেতু করোনায় মানুষ কর্ম হারিয়েছে,হারিয়েছে সহায় সম্বল তাই এই মানুষ গুলো কে কিভাবে আয়ের ব্যাবস্থা করে দেয়া যায়। তখন তারা অসহায় মা-বোনদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই মেশিন, হাসঁ-মুরগি,কবুতর ইত্যাদি বিতরণ করে। এখন পর্যন্ত ২০ টি সেলাই মেশিন এবং ২৫ টি পরিবার কে হাসঁ-মুরগি বিতরণ করতে সক্ষম হয় তারা। তাদের এসব উদ্যোগের লক্ষ ও উদ্দেশ্য সমন্ধে সংগঠন এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মুহতাসিম আবশাদ জিসান বলেন,” মলিন স্বপ্ন গুলোকে আলোকিত করার প্রত্যয়ে ই আমাদের পথচলার শুরু। আমরা যুবক বয়স থেকেই সমাজের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই যাতে আগামীতে আমাদের চরিত্রে খারাপ দিকগুলো বিকশিত হতে না পারে। তবে আমরা সকলে শিক্ষার্থী। আমাদের কারোই ব্যাক্তিগত আয় নেই। আমরা মানুষের সাহায্য সহোযোগিতায় এই কাজ গুলো পরিচালনা করছি। তাই সমাজের বিত্তবান রা যদি আমাদের পাশে দাড়ায় আমরা আরো ব্যাপক পরিসরে সমাজের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারবো।” দেশের প্রতিটি দূর্যোগ এবং আন্দোলনে যুব সমাজ এর সক্রিয় ভূমিকা ছিলো বলেই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। তাই এই উদ্যোমী যুব সমাজের হাত ধরে অচিরেই বাংলাদেশে উন্নয়নের শীর্ষ স্থানে পৌঁছাবে ইনশাআল্লাহ।